বাংলাদেশে ডেঙ্গির প্রকোপ এবার ‘এন্ডেমিকের’ (মহামারী সাধারণ রোগে রূপান্তর) পর্যায়ে চলে গেছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কিন্তু এবার বর্ষা চলে যাওয়ার পরও এই প্রকোপ কমেনি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ তাপমাত্রা পরিস্থিতি, বৃষ্টি এবং নানা কারণে সৃষ্ট জলজট আর অপরিকল্পিত নগরায়ণ এর জন্য দায়ী। অন্যদিকে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার এই প্রকোপ কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দেখা দিয়েছে। এটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, গত ছয় দশক (১৯৫১-১৯৬০) আগের তুলনায় বিগত এক দশকে (২০১২-২০২১) বিশ্বে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর বর্ধিত পরিস্থিতির দায় কেবল জলবায়ু পরিবর্তন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের গবেষণায় ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে উল্লিখিত বৈশ্বিক চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া একই গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানবজীবনের বিভিন্ন দিকে আর কী প্রভাব পড়ছে, তাও তুলে আনা হয়েছে।

জানা যায়, বিশ্বের ৯৯ জন গবেষক ওই গবেষণাকর্মটি চালিয়েছেন। ‘দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ’ (জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যের ওপর ল্যানসেট কাউন্টডাউন) শীর্ষক এই গবেষণার ফল আজ বৈশ্বিকভাবে প্রকাশ করবে ল্যানসেট। এ উপলক্ষ্যে লন্ডন সময় সকাল ৯টা আর বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এবার বাংলাদেশেও একই সঙ্গে গবেষণা ফল প্রকাশ করা হবে। এ উপলক্ষ্যে বিকালে ঢাকার চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (সিএইচআরএফ) অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে গবেষণাসংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের অংশ তুলে ধরবেন ওই গবেষণা দলের একমাত্র বাংলাদেশি গবেষক ড. সৌর দাশগুপ্ত। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাজউদ্দিন সিকদার প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

ল্যানসেট গবেষক ড. সৌর দাশগুপ্ত মূলত ইউরো-মেডিটেরানিয়ান সেন্টার অন ক্লাইমেট চেঞ্জের একজন পরিবেশ অর্থনীতিবিদ। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানবজীবনে কী কী ক্ষতি হচ্ছে বা হতে পারে, এমন ৪৩টি নির্দেশকের (ইনডিকেটর) ওপর গবেষণাকর্মটি পরিচালিত হয়। ৯৯ জন গবেষক বিভিন্ন ইনডিকেটর ভাগ করে নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি খাদ্য নিরাপত্তা এবং সমুদ্রস্তর বৃদ্ধিসংক্রান্ত দুটি বিষয়ে এই গবেষণায় অবদান রেখেছেন। তিনি জানান, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির পেছনে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের দায় পেয়েছেন। বাংলাদেশে এবারে ডেঙ্গির প্রকোপ এন্ডেমিক পর্যায়ে চলে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টি থেকে জলাবদ্ধতা আর অপরিকল্পিত নগরায়ণ ঢাকায় এই ডেঙ্গি প্রকোপের জন্য দায়ী।

এদিকে গবেষণা প্রতিবেদনটি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হলেও ২৬ অক্টোবর এটি ল্যানসেটের বার্ষিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদন থেকে মোটা দাগে ১৫টি দিক গুরুত্ব দেওয়া যায়।